শোক বার্তা
ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী আলহাজ্ব এডভোকেট শেখ মোঃ আবদুল্লাহ'র মৃত্যুতে আমরা গভীরভাবে শোকাভিভূত।
গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে নিয়োজিত মাননীয় প্রতিমন্ত্রী ও ইসলামিক ফাউন্ডেশনের বোর্ড অফ গভরনর্স এর চেয়ারম্যান, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্নেহধন্য, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু কন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনার ঘনিষ্ঠ সহচর, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্বাচনী এলাকা জাতীয় সংসদ এর নির্বাচনী আসন-২১৭, গোপালগঞ্জ-৩ (টুঙ্গিপাড়া - কোটালী পাড়া) এর দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রতিনিধি আলহাজ্ব এডভোকেট শেখ মোঃ আব্দুল্লাহ গত ১৩-০৬-২০২০ রাত ১১.৪৫ মিনিটে ঢাকার সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে বার্ধ্যক্যজনিত কারণে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ইন্তেকাল করেন। (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহী রাজিউন।)
ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রাণপ্রিয় অভিভাবক মাননীয় ধর্ম প্রতিমন্ত্রী আলহাজ্ব এডভোকেট শেখ মোঃ আব্দুল্লাহ এর মৃত্যুতে ইসলামিক ফাউন্ডেশনের সর্বস্তরের কর্মকর্তা- কর্মচারীগণ ভীষণভাবে শোকাভিভূত এবং গভীরভাবে মর্মাহত। হঠাৎ করে অভিভাবক হারানোর এই বিশাল ক্ষতি পূরণ হবার নয়। আমরা তাঁর বিদেহী আত্মার মাগফিরাত কামনা করছি। মহান আল্লাহ তায়ালা তাকেঁ জান্নাতুল ফেরদাউস নসিব করুন। একই সাথে তাঁর শোকসন্তপ্ত পরিবারের সদস্যদের প্রতি গভীর সমবেদনা প্রকাশ করছি।
মৃত্যুকালে মরহুমের বয়স হয়েছিল ৭৫ বছর। মৃত্যুকালে তিনি স্ত্রী, পুত্র, কন্যা, এবং রাজনৈতিক সহকর্মীসহ অসংখ্য গুণগ্রাহী রেখে গেছেন।
মরহুম আলহাজ্ব এডভোকেট শেখ মোঃ আব্দুল্লাহ ছিলেন বর্নাঢ্য রাজনৈতিক জীবনের অধিকারী। ১৯৪৫ সালের ৮ সেপ্টেম্বর গোপালগঞ্জ জেলার মধুমতী নদীর তীরবর্তী কেকানিয়া গ্রামের এক সম্ভ্রান্ত ধার্মিক মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতা মরহুম আলহাজ্ব শেখ মো: মতিউর রহমান এবং মাতা মরহুমা আলহাজ্ব মোসাম্মৎ রাবেয়া খাতুন। চার ভাই তিন বোনের মধ্যে তিনি দ্বিতীয়।
তিনি পবিত্র কোরআন হেফজের মাধ্যমে শিক্ষা জীবন শুরু করেন। এর পর একই মাদ্রাসার কওমী ধারায় পড়াশুনা করেন। তিনি সুলতানশাহী কেকানিয়া প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে প্রাথমিক শিক্ষা এবং সুলতানশাহী কেকানিয়া হাই স্কুল থেকে ১৯৬১ সালে মেট্রিক পাস করেন। তিনি খুলনার আযম খান কলেজ থেকে ১৯৬৩ সালে উচ্চ মাধ্যমিক, ১৯৬৬ সালে বিকম (অনার্স) ডিগ্রী সম্পন্ন করেন। পরবর্তীতে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯৭২ সালে এম.কম. এবং ১৯৭৪ সালে অর্থনীতিতে এম.এ ডিগ্রি অর্জন করেন। তিনি ১৯৭৭ সালে ঢাকা সেন্ট্রাল ‘ল’ কলেজ থেকে এলএলবি ডিগ্রী অর্জন করেন।
শিক্ষা জীবন শেষে তিনি সুলতানশাহী কেকানিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক হিসেবে কর্মজীবন শুরু করেন। পরবর্তীতে তিনি এডভোকেট হিসেবে গোপালগঞ্জ জজকোর্ট এবং ঢাকা জজকোর্টে আইন পেশা শুরু করেন।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আদর্শ ধারণ করে ছাত্রজীবনেই তিনি রাজনীতির সাথে যুক্ত হন। তিনি খুলনার আযম খান কমার্স কলেজে প্রথম ভিপি নির্বাচিত হন। ১৯৬৬ সালের বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে ছয়দফা আন্দোলনে তিনি সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেন। বঙ্গবন্ধুর সাথে যোগাযোগের মাধ্যমে রাজনীতিতে গভীরভাবে সম্পৃক্ত হন। যুবলীগের প্রতিষ্ঠাতা যুবনেতা শেখ ফজলুল হক মনির নেতৃত্বে তিনি আওয়ামী যুবলীগে যোগদান করেন। এ সময় তিনি গোপালগঞ্জ জেলা আওয়ামীলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক এবং গোপালগঞ্জ জেলা আওয়ামী যুবলীগের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। এরপর তিনি কেন্দ্রীয় আওয়ামী যুবলীগের সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। তিনি বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সাবেক ধর্ম বিষয়ক সম্পাদক, গোপালগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।
মরহুম আলহাজ্ব এডভোকেট শেখ মোঃ আব্দুল্লাহ ১৯৬৯ সালের গণঅভ্যুত্থান আন্দোলনে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেন। এরপর ১৯৭০ এর নির্বাচনে স্থানীয় রাজনীতিতে জড়িত হয়ে বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে আওয়ামী লীগের নির্বাচনী কার্যক্রমে অংশগ্রহণ করেন। তিনি ছিলেন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আদর্শের একজন পরীক্ষিত সৈনিক। তিনি আমৃত্যু জাতির পিতার আর্দশকে ধারণ করে দেশ ও মানুষের কল্যাণে কাজ করে গেছেন। তিনি ১৯৭৩ সালে স্বাধীন বাংলাদেশ সরকারের অধীনে অনুষ্ঠিত বি.সি.এস পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েও রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে দেশসেবা করার লক্ষ্যে চাকরির পরিবর্তে বঙ্গবন্ধুর আদর্শ এবং তাঁর নেতৃত্বে রাজনীতি করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন। ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ফ্রন্ট মুজিব বাহিনীর সাথে সরাসরি সম্পৃক্ত হয়ে মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন। বাঙ্গালীর স্বাধীনতা সংগ্রাম শুরু হলে তিনি মুক্তিযুদ্ধে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেন।
একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করলে মরহুম আলহাজ শেখ মো. আব্দুল্লাহ ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব লাভ করেন। এ ছাড়া তিনি গোপালগঞ্জ-৩ আসনের নির্বাচিত সাংসদ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মনোনীত প্রতিনিধির দায়িত্ব পালন করছিলেন। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ঘনিষ্ঠ সহচর মরহুম শেখ মোহাম্মদ আবদুল্লাহ বর্তমান সরকারের সঙ্গে আলেম ওলেমা, পীর মাশায়েখদের সম্পর্কোন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। কাউমি মাদ্রাসায় অধ্যয়নরত হাজার হাজার ছাত্র/ছাত্রীর শিক্ষাগত সনদের সরকারি স্বীকৃতির বিষয়ে তিনি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। তাঁর ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় পবিত্র মসজিদুল হারাম শরিফ ও মসজিদে নববী শরিফের ইমামগণ বাংলাদেশ সফর করেন।
ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব গ্রহণ করার পর পরই তিনি মন্ত্রণালয় ও তার আওতাধীন দপ্তরসমূহের সকল কর্মকর্তাদের সততা ও নিষ্ঠার সঙ্গে দায়িত্ব পালনের নির্দেশ প্রদান ও তা বাস্তায়ন করেন। তিনি হজ ব্যবস্থাপনার উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ গ্রহণ করেন। তাঁর একান্ত চেষ্টায় রাজকীয় সৌদি সরকারের সঙ্গে যোগাযোগ করে হজযাত্রীর কোটা বৃদ্ধি, সৌদি আরবেব হাজীদের সুযোগ সুবিধা বৃদ্ধি এবং হজযাত্রীদের সৌদি আরবের ইমিগ্রেশন ঢাকায় সম্পন্ন করার ব্যবস্থা গ্রহণ করেন। জেদ্দা বিমানবন্দরের হজ টার্মিনাল এয়ারকন্ডিশন স্থাপনের জন্য সফল আলোচনা করে তা বাস্তবায়নের উদ্যোগ গ্রহণ করেন। শান্তিপূর্ণভাবে তাবলিগ জামায়েতের সমাবেশ আয়োজনে কার্যক্রম গ্রহণ করেন। হাজার হাজার আলেম ওলেমার কর্ম সংস্থানের সুযোগ সম্বলিত মসজিদ ভিত্তিক শিশু ও গণ শিক্ষা প্রকল্পের ৭ম পর্যায় অনুমোদনে আন্তরিক অবদান রাখেন। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর অগ্রাধিকার প্রকল্প ৫৬০টি মডেল মসজিদ নির্মাণ তরান্বিত করায় ভূমিকা রাখেন। করোনা মহামারির সময় স্বাস্থ্যবিধি ও সামাজিক দুরত্ব বজায় রেখে ইবাদত/ উপাসনার বিষয়ে আলেম ওলেমা ও ধর্মীয় নেতৃবৃন্দের পরামর্শ গ্রহণ করে দিক নির্দেশনা প্রদান করেন। ইসলামিক ফাউন্ডেশনের প্রভুত উন্নতি সাধনের পাশাপাশি হিন্দু, বৌদ্ধ ও খ্রিস্টান সম্প্রদায়সহ সকল ধর্মীয় সম্প্রদায়ের উন্নয়নের মাধ্যমে অসম্প্রদায়িক বাংলাদেশ বিনির্মাণে তিনি অবদান রাখেন। তাঁর এ সকল কার্যক্রম দেশে বিদেশে সর্ব মহলে প্রশংসিত হয়েছে।
মহান মুক্তিযুদ্ধের আদর্শ, গণতন্ত্র ও অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে তাঁর অবদান চির স্মরণীয় হয়ে থাকবে। তাঁর মৃত্যুতে দেশ ও জাতির জন্য এক অপূরণীয় ক্ষতি সাধিত হয়েছে। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আদর্শের এ সৈনিক মরহুম আলহাজ্ব এডভোকেট শেখ মোঃ আবদুল্লাহ’র আত্মার মাগফিরাত কামনা করছি এবং তাঁর শোকসন্তপ্ত পরিবার এবং জাতি যেন এ ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে পারে তার জন্য মহান আল্লাহর নিকট প্রার্থনা করছি।
মোঃ ফরিদুল হক খান এম.পি.
মাননীয় মন্ত্রী, ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয়
গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার
ও
চেয়ারম্যান, বোর্ড অব গভর্নর, ইসলামিক ফাউন্ডেশন
১০৬
দুদক হটলাইন
৯৯৯
জরুরী সেবা হটলাইন
৩৩৩
নাগরিক সেবা হটলাইন
১০৯৮
শিশুর সহায়তায় হটলাইন
১০৯
নারী ও শিশু নির্যাতন হটলাইন
পরিকল্পনা ও বাস্তবায়নে: মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ, এটুআই, বিসিসি, ডিওআইসিটি ও বেসিস।
কারিগরি সহায়তায়: